অভিবাসন ঠেকাতে ব্রিটেনে ভিসা-নীতি কঠোর করছে ঋষি সুনকের সরকার
Agartala, Dec 06, 2023, ওয়েব ডেস্ক থেকে
লন্ডন: ব্রিটেনে অভিবাসীর সংখ্যা অতিরিক্ত বেড়ে গিয়েছে। যার জেরে এবার নতুন ভিসা নীতি আনছে ঋষি সুনকের সরকার। এই নতুন নীতিতে ভিসাপ্রার্থী বিদেশি কর্মীদের ন্যূনতম বেতনের ঊর্ধ্বসীমা বৃদ্ধি করা, পরিবারের সদস্যদের ব্রিটেনে নিয়ে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি-সহ একাধিক বিষয়ে নিয়ম কঠোর করা হয়েছে। মূলত, অভিবাসনের হার কমানোর লক্ষ্যেই এই নতুন ভিসা নীতি ব্রিটেনে কার্যকর করতে চলেছে সুনকের সরকার। যা ভারতীয়দের উপরেও প্রভাব ফেলতে চলেছে।
অভিবাসনের হার বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ উদ্বেগ প্রকাশ করে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক সোমবারই X হ্যান্ডলে লিখেছেন, “অভিবাসন অতিরিক্ত বেড়ে গিয়েছে। সেটা কমানোর জন্য আমরা কঠোর পদক্ষেপ করছি। অভিবাসন যাতে ব্রিটেনের উপকারে লাগে সেটা নিশ্চিত করা হবে।” আরেকটি পোস্টে তিনি লেখেন, “অভিবাসনের গতি রুখতে সবচেয়ে বড় কাটছাঁট ঘোষণা করলাম। আগের ইতিহাসে কোনও প্রধানমন্ত্রী এরকম করেননি। মোট অভিবাসনের হার অতিরিক্ত হয়ে গিয়েছে এবং এটা বদল করবই। আমি এটা করার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”
সোমবারই নতুন ভিসা নীতি পার্লামেন্টে পেশ করেছেন ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি। তিনি অভিবাসীদের ভিসা-নীতিতে যে কাটছাঁটের ঘোষণা করেছেন, তা ভারতীয়দের উপরেও প্রভাব ফেলবে। ক্লেভারলি ভিসা-নীতিতে পাঁচ দফা বদলের কথা ঘোষণা করেছেন, যার মধ্যে কাজের জন্য ভিসাপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বেতনের ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে দেওয়া থেকে হেল্থ অ্যান্ড কেয়ার ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসাতেও বদলের কথা রয়েছে।
এতদিন পর্যন্ত ব্রিটেনে কাজের ভিসা পেতে গেলে বার্ষিক ন্যূনতম বেতন হতে হত ২৬,২০০ পাউন্ড ((প্রায় ২৮ লক্ষ টাকা)। এখন নয়া বিধিতে ভিসাযোগ্য বেতন হতে হবে বছরে ৩৮৭০০ পাউন্ড (প্রায় ৪১ লক্ষ টাকা)। আগামী এপ্রিল থেকে এই বিধি কার্যকর হবে। অর্থাৎ কম বেতনের কাজ নিয়ে ব্রিটেনে যাওয়া যাবে না। এছাড়া বহু ভারতীয় ব্রিটিশ রেস্তরাঁ বা হসপিটালিটি পরিষেবায় ছোট থেকে মাঝারি পদের কাজ নিয়ে ব্রিটেন যেতেন, সেই সুযোগও আর থাকবে না। আবার হেল্থ অ্যান্ড কেয়ার ভিসায় কিছুটা ছাড় থাকলেও জীবনসঙ্গী বা পরিবারের অন্য কোনও সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আনা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ভারত-সহ ভিন্দেশিদের অনেকেই ব্রিটেনে কাজ নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়বেন।
আবার ভিন্দেশি পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে, গবেষণার মতো উচ্চশিক্ষার জন্য আসা পড়ুয়ারা ছাড়া ভিন্দেশি পড়ুয়ারা তাঁদের জীবনসঙ্গীকে নিয়ে আসতে পারবেন না। এছাড়া পড়ুয়াদের ভিসায় স্নাতক কোর্স সম্পূর্ণ হয়ে গেলে কাজ পাওয়ার নিশ্চয়তা ছাড়াই দু-বছর পর্যন্ত ব্রিটেনে থাকা যেত। এবার সেটা পুনর্বিবেচনা করা হবে বলে নয়া ভিসা নীতিতে জানানো হয়েছে।
ঋষি সুনক সরকারের এই নতুন ভিসা নীতিতে ভারতীয়রাও প্রভাবিত হবে। কেননা বহু ভারতীয় কম বা মাঝারি বেতনের চাকরি নিয়ে এবং ভারতীয় মেয়েকে বিয়ে করে ব্রিটেনে গিয়ে বসবাসের স্বপ্ন দেখে। আবার অনেক ভারতীয় ব্রিটেনে পড়াশোনা সম্পূর্ণ করার পর থেকে যায়। এবার আর সেটা করা সহজ হবে না। আবার পেটের দায়ে ব্রিটেনে চাকরি করলে এবং স্ত্রী-পরিবারকে সঙ্গে রাখতে না পারলে তার প্রভাবও তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ব্রিটেন সরকার সেদেশে অভিবাসনের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, ২০২২ সালে ব্রিটেনে ৭ লাখ ৪৫ হাজার মানুষ অভিবাসন গ্রহণ করেছে, যা ব্রিটেনের অভিবাসন ইতিহাসে সর্বোচ্চ।