বড় জয় আন্দোলনকারীদের, ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগে ‘সুপ্রিম’ সিলমোহর
Dhaka, Jul 21, 2024, ওয়েব ডেস্ক থেকে
ঢাকা: বাংলাদেশে কোটা বিরোধী আন্দোলনে বড় জয়। সংরক্ষণ নিয়ে হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। আজ, রবিবার বাংলাদেশে সংরক্ষণ নিয়ে হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে মামলার শুনানি ছিল সুপ্রিম কোর্টে। সে দেশের সুপ্রিম কোর্টের তরফে হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দেওয়া হয়। ফিরছে পুরনো নিয়মই। ৯৩ শতাংশ নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে।
কোটা বা সংরক্ষণের বিরোধিতাতেই উত্তাল বাংলাদেশ। সংরক্ষণ বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদে পথে নেমেছে পড়ুয়ারা। বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছে পুলিশ-সেনার বন্দুকের নলের সামনে। পড়ুয়াদের এই আন্দোলন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে পরিণত হয়েছে। পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ১১৫ জনের। জারি হয়েছে কার্ফু। শুট অ্যাট সাইটেরও নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে আজ সুপ্রিম কোর্টে শুনানি ছিল সংরক্ষণ নিয়ে হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে মামলায়।
কার্ফুর মধ্যেই এদিন সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের সংরক্ষণ নিয়ে শুনানি শুরু হয়। সরকার পক্ষের তরফে অ্যাটর্নি জেনারেল হাইকোর্টের রায় বাতিল করার আবেদনই জানানো হয়। সুপ্রিম কোর্টের তরফে হাইকোর্টের সংরক্ষণ পুনর্বহালের রায়কে বাতিল করে দেওয়া হয়। আপিল বিভাগের তরফে বলা হয়েছে, “এবার থেকে সরকারি চাকরিতে ৯৩ শতাংশ নিয়োগ করা হবে মেধার ভিত্তিতে। বাকি ৭ শতাংশ সংরক্ষিত থাকবে। এর মধ্যে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য, ১ শতাংশ নৃগোষ্ঠী এবং ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী-তৃতীয় লিঙ্গের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।”
বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের তরফে জানানো হয়েছে, যেহেতু এটি নীতি সংক্রান্ত বিষয়, তাই পরবর্তীতে প্রয়োজন হলে সরকার এই সংরক্ষণ বা কোটার হার পরিবর্তন বা সংস্কার করতে পারবে। তবে সরকারকে অবিলম্বে কোটা প্রত্যাহারের রায় নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে। শীর্ষ আদালতের তরফে আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের ক্লাসরুমে ফিরতে অনুরোধ করা হয়েছে।
জানা গিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে অংশ নেওয়া নয়জন আইনজীবীর মধ্যে আটজনই হাইকোর্টের আদেশ বাতিল করার পক্ষে মত দেন। একজন আইনজীবী কোটা সংস্কারের পক্ষে মতামত দেন।
শুনানি শেষের পর আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের প্রতিনিধি শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, “এটি ঐতিহাসিক রায়। সকলে যেন এই রায় মেনে নেন। শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে যান।”
সংরক্ষণ ও বিতর্ক-
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা, জেলা, মহিলা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধী – এই পাঁচ শ্রেণির জন্য মোট ৫৬ শতাংশ কোটা বা সংরক্ষণ ছিল। ২০১৮ সালে এই সংরক্ষণ বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদ শুরু হয়। চাপের মুখে পড়েই হাসিনা সরকার সংরক্ষণ বাতিলের কথা ঘোষণা করে। কেবল জনজাতিদের ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের ১ শতাংশ সংরক্ষণ বহাল রাখা হয়। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে গিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার। চলতি বছরের ৫ জুন হাইকোর্ট সংরক্ষণের সিদ্ধান্তকে খারিজ করে পুরনো নিয়মই ফিরিয়ে আনে। আগের মতো সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু হয় বাংলাদেশে। এরপরই ফের প্রতিবাদে রাস্তায় নামে পড়ুয়ারা। বিগত কয়েকদিনে তা ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয় কমপক্ষে ১১৫ জনের। দেশজুড়ে জারি রয়েছে কার্ফু। বন্ধ ইন্টারনেট, মেসেজ পরিষেবাও।