অবস্থানে অনড় নেতানিয়াহু, রাফায় হামলা অব্যাহত


newsagartala24.com Images

Agartala, Jun 02, 2024, ওয়েব ডেস্ক থেকে


সবচেয়ে কাছে বন্ধু আমেরিকাও এ বার বলছে, যুদ্ধ থামাও। গত কাল হোয়াইট হাউসে দাঁড়িয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুদ্ধবিরতির তিন দফা প্রস্তাব দিয়েছে ইজ়রায়েলকে। প্যালেস্টাইনি জঙ্গি গোষ্ঠী হামাস বাইডেনের সেই প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেও ইজ়রায়েল নিজেদের অবস্থানে অনড়। বরং বাইডেনের ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দক্ষিণ গাজ়ার রাফায় হামলা চালিয়েছে ইজ়রায়েলি ট্যাঙ্ক। পশ্চিম রাফার পাশেই তাল আল-সুলতানেও গুলি চলেছে। রাফার পূর্ব দিক থেকে গোলাবর্ষণের খবর মিলেছে। রাফার এক বাসিন্দা বলেছেন, ‘‘কাল সারা রাত বোমা ফেলেছে ওরা। এক মুহূর্তের জন্য থামেনি।’’

ইজ়রায়েলকে পিছু হটার আর্জি জানিয়ে গত কাল বাইডেন বলেছেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে অন্তত ছ’সপ্তাহের জন্য যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে হবে।’’ আরও জানিয়েছেন, এই সময়ে ইজ়রায়েলি পণবন্দিদের ফিরিয়ে দিতে হবে হামাসকে। ইজ়রায়েলও বিনিময়ে প্যালেস্টাইনি বন্দিদের মুক্তি দেবে। ধাপে ধাপে গাজ়ার পুনর্নির্মাণ এবং সেখান থেকে ইজ়রায়েলি সেনা প্রত্যাহার, তিন দফা প্রস্তাবে সবটাই জানিয়েছেন বাইডেন। তাঁর আবেদনে ‘সদর্থক’ ইঙ্গিত দিয়েছে হামাস। কিন্তু ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে অবিচলিত দেখিয়েছে। আজ একটি বিবৃতি দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে ইজ়রায়েলের শর্ত এখনও একই রয়েছে। বদল হয়নি। হামাসের বাহিনী ও সরকারকে নিশ্চিহ্ন করা, বন্দিদের মুক্ত করা এবং গাজ়া যাতে কোনও ভাবেই ইজ়রায়েলের জন্য আর বিপজ্জনক না থাকে, তা নিশ্চিত করা।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘স্থায়ী ভাবে যুদ্ধ বন্ধ করার আগে ইজ়রায়েল তার শর্তপূরণ করবেই।’’

এখনও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শতাধিক ইজ়রায়েলি গাজ়ায় হামাসের ডেরায় বন্দি রয়েছেন। তাঁরা কী অবস্থায় রয়েছেন, কোথায় রয়েছেন, কেউ জানে না। মাঝে বহু বার এমন খবর এসেছে যে, ‘আত্মঘাতী হামলা’ চালিয়েছে ইজ়রায়েল। তাদের বোমা-গুলিতে নিজেদের লোকেদেরই প্রাণ গিয়েছে। ফলে পণবন্দিদের বাড়ির লোকজনও চাইছেন ইজ়রায়েল সরকার বাইডেনের প্রস্তাব গ্রহণ করুক। ইজ়রায়েলের বিরোধী নেতা জাইর লাপিদ এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘বাইডেনের প্রস্তাব উপেক্ষা করতে পারে না ইজ়রায়েল সরকার। টেবলে একটা চুক্তি তৈরি রয়েছে। সেটা সম্পূর্ণ হওয়া প্রয়োজন।’

গিলি রোম্যান নামে এক ইজ়রায়েলি বিক্ষোভকারী সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, তাঁরা চান ঘরের লোক ঘরে ফিরুক। গিলির বোন ও বোনের বরকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল হামাস। নভেম্বরের যুদ্ধবিরতিতে বোন মুক্তি পেলেও বোনের বর ফেরেননি। গিলি বলেন, ‘‘ওঁদের প্রাণ বাঁচানোর এটাই শেষ সুযোগ।’’ শ্যারোন লিপশিৎজ় নামে আর এক ইজ়রায়েলি মহিলা বলেন, ‘‘পণবন্দিদের কত জন আর বেঁচে নেই। মন ভেঙে যাচ্ছে। সরকার ইতিমধ্যেই ভয়ানক দেরি করে ফেলেছে।’’ শ্যারোনের মা ইয়োশেভেদ নভেম্বরে মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু বাবা ওদেদ এখনও হামাসের হাতে বন্দি।

শ’য়ে শ’য়ে প্যালেস্টাইনিও বন্দি রয়েছেন ইজ়রায়েলি জেলে। হামাস-জঙ্গি সন্দেহে গাজ়া থেকে তাঁদের তুলে এনেছে বাহিনী। এর একটা বড় অংশ জখম। দক্ষিণ ইজ়রায়েলের বিরশেবায় একটি নির্দিষ্ট ‘হাসপাতালে’ তাঁদের চিকিৎসা চলছে। যুদ্ধচলাকালীন একটি জেলের পাশে অস্থায়ী হাসপাতালটি খোলা হয়েছে। কারণ ইজ়রায়েলের সাধারণ হাসপাতালগুলি ‘জঙ্গিদের’ চিকিৎসা করতে রাজি নয়। বিরশেবার হাসপাতালটির কয়েক জন কর্মী নাম গোপন রেখে জানিয়েছেন, বন্দি প্যালেস্টাইনি রোগীদের হাত-পা বাঁধা, চোখ বাঁধা। ওই অবস্থাতে শুইয়ে রাখা হয়েছে তাঁদের। পেনকিলার ছাড়াই অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। হাসপাতাল বলতেও জায়গাটি বড়সড় তাঁবুর মতো। তার ভিতরে ডজনখানেক শয্যা। চিকিৎসা পরিষেবাও সেই অর্থে কিছু নেই। ইজ়রায়েলি চিকিৎসক জোয়েল ডনচিনের কথায়, ‘‘বামপন্থী উদারমনস্করা আমাদের নিন্দা করছেন। তাঁদের অভিযোগ আমরা চিকিৎসকের নীতি মেনে সেবা করছি না। ও দিকে, কট্টরপন্থীরা বলছেন, আমরা সন্ত্রাসবাদীদের চিকিৎসা করেছি, আমরাও অপরাধী।’’