অস্বাভাবিক গরম নিয়ে বিশিষ্ট ডাক্তার কনক চৌধুরীর পরামর্শ
আগরতলা, Sep 29, 2023, ওয়েব ডেস্ক থেকে 2023
বাংলা পঞ্জিকায় আজ ১১-ই আশ্মিন। অথচ গরমের ভাবে মনে হচ্ছে চৈত্রের মেলা সবে শুরু! মাঝেমধ্যে শুধু দু-এক পশলা বৃষ্টির খাতিরে খানিকটা রেহাই। নতুবা সেই সকাল থেকেই "আগুন জ্বালো,আগুন জ্বালো"। সে যাইহোক,প্রতিকার-ই যেহেতু সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি, তাই আপনাদের কাছে আবার এলাম। আমাদের বাচতে হবে,সুস্থ ভাবেই বাচতে হবে।জল,গাছের ছায়া আর ফল এই গরমে আমাদের সুন্দর ভাবে রক্ষা করতে পারে। চলুন আমরা জল আর ফল নিয়ে কিছু আলোচনা করি। ত্রিপুরায় পানীয় জলতো মোটামুটি সহজেই পেয়ে যাবেন।কিন্তু মধুমাস পেড়িয়ে এসে এই যে অস্বাভাবিক গরম,এই সময়ে কি ফল পাবেন বা কি খাবেন? জলই বা কিভাবে গ্রহণ করা সঠিক?
জল : পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করতেই হবে। দিনে অন্তত ৩-৪ লিটার জল খাওয়া উচিত। সকালে খালি পেটে জল খাওয়া খুব জরুরি। রাতে ঘুমের কারণে শরীরে জলের ঘাটতি হয়। এজন্যেই খালি পেটে জল খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সুস্থ থাকতে খালি পেটে অন্তত ১ গ্লাস জল খান।অনেকে খাবার খাওয়ার সময় প্রচুর জল পান করেন। এই অভ্যাসে শরীরের ক্ষতি হয়।খাওয়ার আগে জল পান করলে পেট পরিষ্কার হয়, যা ওজন কমাতে পারে। খাবার অনন্ত ৩০ মিনিট আগে জল পান করলে,খাবার দ্রুত হজম হয়।
শরীর খাদ্য থেকে সর্বাধিক পুষ্টি পেতে সক্ষম হয়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন যে, সারা দিনে তিন লিটার জল পান করা উচিত। তবে মনে রাখতে হবে যে, অতিরিক্ত জল পান করলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। তাই এজন্যে সতর্ক থাকা জরুরি। তবে কতটা জল খাবেন এবং কখন খাবেন, এটা ব্যক্তি বিশেষে আলাদা হতে পারে। তাই পরামর্শ করতে পারেন চিকিৎসক কিংবা ডায়েটিশিয়ানের সঙ্গে।
ফল : দিনের যে কোনও সময়েই ফল খেতে পারেন। তবে মিড-ব্রেকফাস্ট বা প্রাতরাশের পর এবং মধ্যাহ্ন ভোজনের এক ঘণ্টা আগে আপনি ফল খেলে বেশি উপকার পাবেন।নেই নেই করেও কিন্তু অনেক স্থানীয় ফল আমাদের নাগালের ভিতরে রয়েছে। ভারতের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রবল বর্ষন ও ভূমিধসে আপেল উৎপাদন ব্যহত হয়েছে। কিন্তু শশা,জাম্বুরা, কলা,পেঁপে,লেবু,ডাব,আখ,মুসাম্বি, তরমুজ বা বাঙি কিন্তু উপস্থিত। এরা কিন্তু সবাই সেরা।তাই, ভোকাল ফর লোকাল! (১)শশা–ভিটামিন এ,বি,সি,কে, ম্যাঙ্গানিজ,তামা আর পটাশিয়ামে ভরপুর।সেই সঙ্গে শসায় জলের পরিমাণও অনেক বেশি। যারা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন,তাদের পেট ভরানোর কাজেও শসা খুবই কার্যকর।শসা ত্বকের জন্যেও খুব ভালো। (২)তরমুজ—গরমকালে সবাই কম বেশি তরমুজ পছন্দ করেন। ঠান্ডা তরমুজ খেতে খুবই ভালো লাগে। এই ফলের ৯২ শতাংশ জল। ফাইবার সমৃদ্ধ ফলটি খেতেও বেশ ভালো লাগে।এছাড়াও তরমুজে আছে ভিটামিন সি,বি৬,বি১ এবং লাইসোপিন। (৩) লেবু –লেবুতে থাকে ভিটামিন সি। যা শুধু প্রচণ্ড তাপ থেকে রক্ষা করে না, ভিতর থেকে সতেজ রাখে। দিনে কয়েক গ্লাস লেবু জল পান করতে পারেন।(৪) কমলা লেবু ও মুসাম্বি — গরমে কমলা লেবু খাওয়ার পরিমাণ বাড়ান।এতে জলের পরিমাণ অনেক বেশি।জলশূন্যতা থেকে রক্ষা করে শরীরকে।এতে উপস্থিত ভিটামিন সি,ফাইবার এবং ক্যালসিয়াম শরীরের জন্য কার্যকর ও রোগ প্রতিরোধী।(৫)ডাবের জল—গরম রোদে কাহিল হয়ে অনেকে কোল্ড ড্রিংকস জাতীয় পানীয় খেয়ে ফেলেন।এতে কিন্তু শরীরের ক্ষতি।কারণ নরম পানীয়তে থাকে প্রচুর পরিমাণে শর্করা। যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই গরমে তেষ্টা পেলে খান ডাবের জল।
ডাবের জলে রয়েছে বিবিধ পুষ্টিগুণ।যা হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমায়।গরমে রাস্তার ফলের জুস ভুলেও খাবেন না।রাস্তার কাটা ফল ও অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো। ভাত,মাংস,তৈলাক্ত খাবার যতটুকু পারা যায় এড়িয়ে চলুন।আরেকটি কথা,দইয়ের ঘোল গরমে খুব উপকারী। দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে নিন বিট নুন। চিনি দেবেন না। টক দই ও বিট নুন ভালো করে মিশ্রণ করে খেতে পারেন।শরীর থাকবে ঠান্ডা ঠান্ডা আর আপনার মাথাটা থাকবে কুল !
সতর্ক থাকুন।ভালো খান,সুস্থ থাকুন।
২৯/০৯/২০২৩,
কনক চৌধুরী।