গোলাঘাট ট্রিপল মার্ডার


newsagartala24.com Images

Agartala, Jul 27, 2023, ওয়েব ডেস্ক থেকে


গোলাঘাট , ২৬ জুলাই : গোলাঘাটে সংগঠিত ট্রিপল মার্ডার মামলার বিচার হবে ফাস্টট্র্যাক আদলতে, অভিযুক্তের যাতে ফাঁসি হয়, তার জন্য আবেদন জানাবে সরকার, আজ বুধবার ভুক্তভোগী জীবিত একমাত্র মেয়ের বাড়িতে গিয়ে এই নিশ্চয়তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

আজ সকালে গোলাঘাটের বিধায়ক তথা অর্থমন্ত্রী অজন্তা নেওগ, মন্ত্ৰী রঞ্জিতকুমার দাস, সরুপথারের বিধায়ক বিশ্বজিৎ ফুকন, খুমটাইয়ের বিধায়ক মৃণাল শইকিয়াদের সঙ্গে নিয়ে ট্রিপল খুনের ঘটনায় শোকাহত পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করে জঘন্য অপরাধে জড়িত অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা। তিনি নিহতদের আত্মীয়দের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারকে সমস্ত প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান এবং গোটা ঘটনার যথাযথ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, অসমের গোলাঘাট জেলায় এক ভয়ঙ্কর ত্রিমুখী খুনের ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। গত সোমবার ২৪ জুলাই বিকেলে গোলাঘাটের হিন্দি স্কুল রোডে ২৫ বছর বয়সি নজিবুর রহমান বরা তার তথাকথিত স্ত্রী সংঘমিত্রা ঘোষ, শ্বশুর সঞ্জীব ঘোষ এবং শাশুড়ি জুনু ঘোষকে ধারালো দা দিয়ে নৃশংসভাবে খুন করেছিল। ওই দিনই খুনি নজিবুর তার আট বছরের পুত্র-সন্তানকে নিয়ে আত্মগোপন করে। কিন্তু বিকেলের শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে গোলাঘাট সদর থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করে খুনি।

পুলিশ সুপার পুশকিন জৈন সেদিন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, অভিযুক্ত নাকি ত্রিমুখী খুনের কথা নিজের মুখে স্বীকার করেছে। ইতিমধ্যে অভিযুক্তকে আদালতে পেশ করে দশদিনের হেফাজতে নিয়ে ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ।

একটা কোভিড লকডাউন-প্রেমের কাহিনি ভয়ঙ্কর ট্রিপল মার্ডারের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। ২০২০ সাল, গোটা দেশ যখন কোভিড লকডাউনে অচল, তখন ফেসবুকের মাধ্যমে নজিবুর ও সংঘমিত্রার মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। কয়েক মাসের মধ্যে বন্ধুত্ব প্রেমে রূপান্তরিত হয়।

সংঘমিত্রার ছোট বোন অঙ্কিতা ঘোষ বলেছে, নজিবুর রহমান নিজেকে হিন্দু, রিমন বরা নামে পরিচয় দিয়ে তার দিদিকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়েছিল। ওই বছরের (২০২০) অক্টোবর, দুর্গাপুজোর সময় দিদি সংঘমিত্রা বিউটি পার্লার থেকে আসার পথে তাঁকে অপহরণ করে নজিবুল। দিদিকে নিয়ে সে কলকাতায় পালিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে ড্রাগসের ইঞ্জেকশন পুশ করে। ইতিমধ্যে সে দিদিকে বিয়েও করে। ইত্যবসরে দিদির শরীরে ঘন ঘন ড্রাগস পুশ করে তাকে মাদকাসক্ত করে ফেলে অভিযুক্ত নজিবুর।

পুলিশ সুপার জৈন জানান, ২৫ বছর বয়সি নজিবুর একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। গোলাঘাটের কুমারপট্টির প্রয়াত খেলিলুর রহমানের ছেলে নজিবুর কলকাতার সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে ২০২১ সালে বিই পাশ করেছে। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে তিনি খুনের শিকার পিতৃ-মাতৃ ও বোন-হারা অঙ্কিতার বক্তব্য স্বীকার করে জানান, সংঘমিত্রাকে বিয়ের পর নানা কারণে তাকে মারধর করত নজিবুর। নজিবুরের পরিবারের সদস্যরাও তাকে শারীরিক নির্যাতন করত। অসহনীয় নির্যাতন এবং প্রাণ রক্ষার খাতিরে গত ২০২১ সালে কোলের শিশুকে নিয়ে কলকাতা থেকে সংঘমিত্রা পালিয়ে গোলাঘাটে (অসম) তার বাড়ি চলে আসে। এসে তাঁকে শারীরিক নির্যাতন সংক্রান্ত এক এফআইআর দায়ের করে। এফআইআর-এর ভিত্তিতে নজিবুরকে পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতের নির্দেশে সংশোধনাগারে পাঠায়। কিছুদিন আগে সে জামিনে মুক্ত হয়ে সম্ভবত প্রতিশোধ নিতে গিয়ে এ কাণ্ড সংগঠিত করেছে, বলেন পুলিশ সুপার।

এদিকে আজ মা-বাবা-দিদি হারানো বোন ও আত্মীয়দের সঙ্গে তাদের ঘরে গিয়ে দেখা করে বাইরে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেন, ‘ঘটনাটি আসলে পৃথক ধরনের। এ সম্পর্কে পুলিশ সুপার এবং ডিআিজির সঙ্গে কথা হয়েছে। মৃত সংঘমিত্রার বোন (জীবিত) অঙ্কিতাকেও অভিযুক্ত নজিবুর মারধর করেছে। এ ঘটনা জানিয়ে আমাকে নাকি সে একটি চিঠি পাঠিয়েছিল। আমি সাধারণত প্রায় সব চিঠি পাই। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমি তার চিঠি পাইনি।’

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার জন্য লকডাউন থাকায় পরিস্থিতি তখন ভিন্ন ছিল। এই জন্য সম্ভবত আমি চিঠিটি মিস করেছি, না-হলে আমি এসপিকে চিঠিটি পাঠিয়ে দিতাম।’ বলেন, ‘নজিবুরের ভাই এবং মা ও ভাইও ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল কিনা, তা আমি সঠিকভাবে বলতে পারব না। পুলিশ আন্তরিকতার সঙ্গে গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছে। তবে আমি মনে করি নজিবুর যে স্বীকারোক্তির দিয়েছে বা দিচ্ছে, তার বাইরে গিয়ে তদন্ত করা দরকার পুলিশের। কেননা, ঘটনার সঙ্গে আরও জড়িত থাকার সম্ভাবনা থাকতেও পারে। তার (নজিবুর) আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, সম্পর্কিত লোকজন, সবাইকে তদন্তের আওতায় আনা উচিত। গোটা ঘটনার সঙ্গে ড্রাগস চক্র জড়িত আমি নিশ্চিত।’

ড. শর্মা আরও বলেন, ‘নজিবুর সংঘমিত্রাকে কলকাতায় নিয়ে কাজির মাধ্যমে বিয়ে করেছে। এটা অবৈধ। একজন হিন্দু মহিলা বা যুবতীকে এভাবে বিয়ে করানো যায় না। প্রথমে মেয়েটিকে মুসলিম ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে হবে, তার পর বিয়ে। কিন্তু এক্ষেত্রে এটা হয়নি। তাই এ বিষয়েও তদন্ত হবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রথম সে ফেসবুকে রিমন বরা বলে হিন্দু নামে পরিচয় দিয়েছিল। প্ৰথমবার কলকাতায় পালিয়ে নিয়ে মেয়েটিকে (সংঘমিত্রা) ইনজেক্টেবল ড্ৰাগস পুশ করে সে। ছেলেটি নিজেও ড্ৰাগস নিত এবং ড্ৰাগস কারবারের সঙ্গেও সে জড়িত ছিল বলে কিছু খবর আমি পেয়েছি। সেভাবেই মেয়েটিকে বশ করেই হোক, কিংবা অন্য কোনওভাবে হোক, একসময় অন্তঃসত্ত্বা হয়। একটি সন্তানের মা-ও হয়েছিল সংঘমিত্রা। পরে যখন মেয়েটি নজিবুলের বাড়িতে থাকতে গিয়েছিল, তখন তার ওপর নিৰ্মম অত্যাচার চালানো হত। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মেয়েটি আবার গহপুরে তার মা-বাবার কাছে সন্তানকে নিয়ে চলে আসে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গুয়াহাটি গিয়ে ডিজিপির সঙ্গে ঘটনা সম্পর্কে আলোচনা করবেন। ট্রিপল মার্ডার ঘটনার বিচার ফাস্টট্র্যাক আদালতে করা এবং অভিযুক্তের যাতে ফাঁসির সাজা হয়, সেজন্য সরকার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা। তিনি রাজ্যের পুলিশ-প্রধানকে নির্দেশ দিয়েছেন, সাতদিনের মধ্যে যেন মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়।

এদিকে, গোলঘাট থেকে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার নির্দেশ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের ডিরেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (ডিজিপি) জ্ঞানেন্দ্র প্রতাপ সিং টুইট করেছেন, ‘স্যার, নির্দেশাবলী মেনে চলতে হবে। আমরা অপরাধী এবং প্ররোচনাকারীদের বিরুদ্ধে ফুল প্রুফ চার্জশিট নিশ্চিত করব। আগের মামলাগুলির তদন্তে যে ত্রুটি ছিল, পূর্ববর্তী তদন্তের বৈধতা এবং তাদের বিয়ের সার্টিফিকেটে বৈধতাও পরীক্ষা করা হবে।’