দুই বছরে কাশী বিশ্বনাথ ১৩ কোটির অধিক পুণ্যার্থীর দর্শনে ৯০০ কোটির প্রকল্পে আয় ৩০০০ কোটি টাকা
Agartala, Jan 15, 2024, ওয়েব ডেস্ক থেকে
ধর্মীয় পর্যটনকে কেন্দ্র দেশের প্রাচীন একটি শহরের কায়াকল্প হচ্ছে বারাণসী গেলেই বোঝা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের কাশী বিশ্বনাথ করিডোর দেশের ওই প্রাচীন শহরের আর্থ সামাজিক মানোন্নয়নে ব্যাপক অংশীদারিত্ব রেখেছে। মাত্র ২ বছরে কাশী ধামে ১৩ কোটির অধিক পুণ্যার্থী দর্শন করেছেন এবং বিশ্বনাথের চরণে মাথা ঠেকিয়েছেন। কাশী বিশ্বনাথ করিডোর নির্মাণে ৯০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। সেখানে মাত্র দুই বছরে ৩০০০ কোটি টাকা ইতিমধ্যে আয় হয়েছে। মূলত, ধার্মিক রীতিনীতি ও ভাবধারা বজায় রেখে আধ্যাত্মিকতার সাথে আধুনিকতার মেলবন্ধনে গড়ে উঠেছে কাশী বিশ্বনাথ করিডোর।
বারাণসী ডিভিশনের কমিশনার কৌশল রাজ শর্মা কাশী বিশ্বনাথ করিডোর সম্পর্কে সবিস্তারে বিবরণ দিয়েছেন। তাঁর কথায়, প্রধানমন্ত্রী পদে নরেন্দ্র মোদী আসীন হওয়ার পর থেকে গৃহীত একাধিক প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম ছিল কাশী বিশ্বনাথ করিডোর। গত কয়েক বছরে ক্রমেই বদলে গিয়েছে মন্দির লাগুয়া সমস্ত অঞ্চল। গত পাঁচ বছরে শুধু মন্দিরকে কেন্দ্র করে বারাণসী শহরের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই, তাতে এই প্রাচীন শহরের আর্থ সামাজিক ব্যবস্থায় উন্নয়ন ঘটেছে। তাঁর দাবি, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা অনুসারেই বারাণসীকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, ইতিপূর্বে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ৩০০০ স্কোয়ার ফিট এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিল। প্রচন্ড ঘিঞ্জি এবং অপরিষ্কার থাকার কারণে অতীতে পুণ্যার্থীরা ভীষণ সমস্যার সম্মুখীন হতেন। কিন্তু, এখন পুণ্যার্থীরা খুবই সুন্দরভাবে কাশী বিশ্বনাথের দর্শন করতে পারছেন। কারণ, নবনির্মিত এই করিডোর ৫ লক্ষ স্কোয়ার ফিট এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে। যা আগের থেকে অনেক বেশি সুসজ্জিত এবং ভীষণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার সাথে প্রতিদিন সাজিয়ে রাখা যাচ্ছে। তাঁর বক্তব্য, মন্দিরকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মানুষের আর্থিক সমৃদ্ধির উৎকৃষ্ট উদাহরণ কাশী বিশ্বনাথ করিডোরে গেলে তবেই বোঝা সম্ভব। ধার্মিক ভাবধারা বজায় রাখার পাশাপাশি স্থানীয় মানুষের রোজগারের অনেক পথ এখন খুলে গেছে।
কৌশল রাজ শর্মার কথায়, এই কাশী বিশ্বনাথ করিডোর নির্মাণে ৯০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। সেই তুলনায় মাত্র দুই বছরে ৩০০০ কোটি টাকা আয় হয়েছে। যার সুফল পাচ্ছেন গোটা বারাণসীর মানুষ। তাঁর দাবি, ধর্মীয় পর্যটন কাশীর পুরনো গৌরব ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিশ্বের প্রাচীনতম এই শহর দশকের দশক উপেক্ষিত থেকেছে। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের এই প্রকল্পের হাত ধরে সার্বিক উন্নতির শিখরে পৌছাতে চলেছে বারাণসী। কারণ, কাশী বিশ্বনাথ করিডোরকে ঘিরে ধর্মীয় পর্যটন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
তাঁর বক্তব্য, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে অযোধ্যা, বারাণসী এবং প্রয়াগরাজকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় বৃত্ত গড়ে উঠছে। আগামী ২২ জানুয়ারি রাম মন্দির উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে ধর্মীয় পর্যটনে বাড়তি মাত্রা যোগ হবে। কারণ, উত্তরপ্রদেশে পা রেখেই দেশ ও বিদেশের পর্যটকরা ওই তিনটি স্থানে খুব সহজেই চলে যেতে পারবেন।
তাঁর দাবি, কাশী বিশ্বনাথ ধাম দর্শনে দেশ-বিদেশ থেকে বছরে সাড়ে সাত কোটি মানুষ বারাণসীতে আসছেন। দুই বছরে ১৩ কোটি পুণ্যার্থী এই শহরে পা রেখেছেন। মন্দির কমিটির রেকর্ড অনুযায়ী প্রতিদিন গড়ে ১ লক্ষ ২০ হাজার পুণ্যার্থী কাশী বিশ্বনাথের চরণে মাথা ঠেকাচ্ছেন। এক দশক আগে এই সংখ্যা ছিল সাকুল্যে কুড়ি হাজার। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক পর্যটক কাশী বিশ্বনাথ করিডোর সফর করেছেন। দেশ-বিদেশের ব্যাপক পর্যটকদের সমাগমের প্রেক্ষিতে জল-স্থল-আকাশ পথে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, সারা দেশেই পর্যটনের ব্যাপক প্রসারে কেন্দ্রীয় সরকার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। তবে ধর্মীয় পর্যটনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বারাণসী ভ্রমণে গেলেই দেখা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে সারা দেশের মধ্যে বারাণসী ধর্মীয় পর্যটনের দিক দিয়ে বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন রাজ্য দেশের এই প্রাচীনতম শহরকে দেখে পর্যটনের উন্নয়নে নতুনভাবে ভাবতে শুরু করবে বলে মনে করা হচ্ছে।