সংবিধান দিবসেই বিশাল মিছিল ও সভা করলো সংযুক্ত কিষান সভা
আগরতলা, Nov 26, 2024, ওয়েব ডেস্ক থেকে 2024
বার দফা দাবি নিয়ে, ভবিষ্যৎ আন্দোলনের কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারকে সতর্ক (চেতাব্নী')করলো সংযুক্ত কিষান মোর্চা ও কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলো।আজ আগরতলায় পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী সংবিধান দিবসেই বিশাল মিছিল ও সভা করলো সংযুক্ত কিষান সভা ত্রিপুরা ও কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলো। এই সভা ও মিছিল ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন মহকুমায় (ধর্মনগর ছাড়া)অনুষ্ঠিত হয়েছে।একই সংযুক্ত কিষান সভা ও সিআইটিইউ যুগ্মভাবে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছেও স্মারকলিপি জমা দিয়েছে। সেখানে ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর সংযুক্ত কিষান মোর্চার সাথে সরকারের লিখিত চুক্তির লঙ্ঘনের অভিযোগে সরকারকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
যে বার দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আজকের মিছিল ও সভার মাধ্যমে সরকারকে সতর্ক করা হল সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, C2+50% ফর্মুলায় ন্যূনতম সহায়ক মূল্য প্রদান, চারটি শ্রম আইন বাতিল করা, সামাজিক নিরাপত্তা সহ মাসিক ন্যূনতম ২৬০০০ টাকা মজুরি প্রদান, কৃষি ঋণ বাতিল করা, ন্যাশনাল মনিটাইজেশন পাইপলাইন বাতিল করা,DAM বা ডিজিটাল এগ্ৰিকালচারেল মিশন বাতিল করা,LAAR act, ও FRA বাতিল করা,২০০ দিনের রেগার কাজ ও ৬০০টাকা মজুরি বৃদ্ধি, ষাটোর্ধ্ব শ্রমিক ও কৃষকদের ১০ হাজার টাকা পেনশন প্রদান, কর্পোরেট -সাম্প্রদায়িক নীতিমালার অবসান ও মহিলা ও শিশুদের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতনের যথাযথ বিচারের জন্যে ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের ব্যবস্থা করা।
মিছিলের পর প্যারাডাইস চৌমুহনীতে একসভায় সংযুক্ত কিষান মোর্চা ত্রিপুরার আহ্বায়ক পবিত্র কর বলেন ২০২০ সালের ৩৮৪ দিনের ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের চাপে নরেন্দ্র মোদীর সরকার কৃষক ও কৃষি বিরোধী তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেদিন যে চুক্তি করেছিলেন সেই চুক্তি আজও কার্যকর করেননি। তিনি বলেন, সেদিন সরকার ও সংযুক্ত কিষান মোর্চার ঐ চুক্তির দাবি গুলো নিয়েই আমরা ও শ্রমিক সংগঠনগুলো যৌথ ভাবে পথে নেমেছি।আর অনন্তকাল অপেক্ষা নয়।তিন মাস অপেক্ষা করা হবে এরপর বৃহৎ আন্দোলন পার্লামেন্টে পৌঁছে গেছে, সরকার বিশ্বাসভঙ্গের জবাব পাবেন। পবিত্র কর বলেন রাজ্যের সাম্প্রতিক বন্যাকে জাতীয় বিপর্যয় বলে ঘোষণা করতেও এই সরকারের অনহা কেন জানি না, রাজ্য সরকারও এই রাজ্যের মানুষের স্বার্থবাহী এই দাবি করেন নি। তিনি বলেন ১৮হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে এই বন্যায়, অথচ সরকারী সাহায্য অনুবিক্ষন যন্ত্রেও ধরা পড়ে না। অথচ এই বন্যায় সমস্ত কৃষি ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী আমাদের সাথে এক মত হয়েছেন তারপরও কিছু হয়নি। তিনি বলেন মোদী সরকার খাদ্যের ওপর ভর্তুকি কমিয়েছে ৬০,৪৭০ কোটি টাকা,সারের ওপর ভর্তুকি কমিয়েছে ৬২,৪৪৫ কোটি টাকা, এভাবেই এই সরকারের কৃষক ও শ্রমিক বিরোধী মনোভাব স্পষ্ট হয়েছে।
সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সি আই টি ইউর রাজ্য শাখার সম্পাদক শঙ্কর দত্ত বলেন আমাদের এই দাবিগুলো মেনে নিলে সাধারণ মানুষের উপকার হতো কিন্তু নরেন্দ্র মোদী সরকার সেটা চাননা। কিন্তু কর্পোরেট মালিক দেশে বিদেশে অপরাধ করেছেন তাকে রক্ষা করতে সচেষ্ট হয়েছেন এ এই দেশের লজ্জা। একটি মানুষ দেশের মানুষের পকেট কাটার কাজ বিদেশের মাটিতে পৌঁছে দিয়েছেন। শুধুমাত্র আদানি শব্দ উঠতেই পার্লামেন্টে স্থগিত হয়ে যায় এটা কিসের লক্ষন? তিনি প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন,'আমাদের দাবি দেখুন সব সাধারণ মানুষের জন্য, সরকার না মানার ক্ষেত্রে অবিচল।" তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন তিন মাসের মধ্যে এই দাবি না মানলে দেশের মানুষ বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিল আজ থেকেই। সিটুর রাজ্য সভাপতি মানিক দে বলেন সব কিছু বিক্রি হয়ে যাচ্ছে বেকারদের কথা ভুলেও ভাবছেনা সরকার।সব কিছুতেই লুট করার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন দেশের বাজেট হচ্ছে একজন কে সুবিধা দিতেই। তিনি বলেন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল ন্যূনতম শ্রম মজুরি ১৮ হাজার টাকা মাসিক করার জন্য সেটা মানেনি সরকার। এরপরও বসে থাকা যায়? রাস্তাই একমাত্র পথ।রাজ্য কৃষক সভার সভাপতি ও জি এম পি নেতা অঘোর দেববর্মা বলেন মোদী সরকার মানুষের স্বার্থে কিছুই করবে না, ওরা শুধু মানুষকে বোকা বানিয়ে যাবে। আন্দোলনের পথই একমাত্র পথ, মানুষই এই পথ বেছে নিয়েছে, শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। তিনি বলেন এই লড়াই হবে জনস্বার্থ বিরোধী উপজাতিদের স্বার্থ বিরোধী সরকারের বিরুদ্ধে। মানুষকে এর জবাব দিতে তৈরি হতে আহ্বান জানান।বক্তব্য রাখেন শ্যামল দে, রঘুনাথ সরকার, রাসবিহারী ঘোষ ও জয় গোবিন্দ দেব রায় ।