NEET-এর তদন্তে পুলিশের জালে এবার ‘ডাক্তার গ্যাং’! চলত কোটি কোটি টাকার কারবার
Agartala, Jun 16, 2024, ওয়েব ডেস্ক থেকে
পটনা: এনইইটি, অর্থাৎ, ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্টকে কেন্দ্র করে, দেশজুড়ে বিতর্ক চলছে। এবার এই পরীক্ষায় পুরো নম্বর, অর্থাৎ, ৭২০ নম্বর পেয়েছেন মোট ৬৭ জন। এর মধ্যে ৬ জন পরীক্ষার্থীই আবার হরিয়ানার ফরিদাবাদের একই পরীক্ষাকেন্দ্রের পরীক্ষার্থী। এরপরই দেশের বিভিন্ন অংশ থেকে এনইইটির প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের দরজা পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে। এই পরীক্ষা পরিচালনা করে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি বা এনটিএ (NTA)। এনটিএ-র বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির সব অভিযোগ সুপ্রিম কোর্টে অস্বীকার করেছে কেন্দ্র। শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান জানিয়েছেন, ৪,৫০০ পরীক্ষাকেন্দ্রের মধ্যে কয়েকটিতে কিছু সমস্যা হয়েছিল, কিন্তু সামগ্রিকভাবে নিট পরীক্ষা সন্তোষজনকভাবে হয়েছে। অথচ, নিট পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়া নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন তথ্য সামনে আসছে। এবার খোঁজ মিলল বিহারের এক প্রশ্ন ফাঁস চক্রের। যে চক্রের মূল হোতা এক চিকিৎসক ও তাঁর বাবা। এই বাবা-ছেলের জুটি এর আগে অন্য প্রবেশিকা পরীক্ষারও প্রশ্ন ফাঁসে অভিযুক্ত বলে জানা গিয়েছে।
গত ৫ মে ছিল নিট পরীক্ষা। পরীক্ষা শুরুর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ঝাড়খন্ড থেকে এক গোপন সূত্রে প্রশ্ন ফাঁসের চক্রটি সম্পর্কে খবর পেয়েছিল পটনা পুলিশ। জানানো হয়েছিল একটি সাদা রেনল্ট ডাস্টার গাড়িতে ওই চক্রের সদস্যরা রয়েছে। পুলিশ ওই গাড়িটিকে ধাওয়া করে আটকেছিল। গাড়িটিতে ওই চক্রের কয়েকজন সদস্যর সঙ্গে চারজন নিট পরীক্ষার্থীর অ্যাডমিট কার্ড ছিল। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ এই চক্রের অন্যান্য সদস্যর সন্ধান পেয়েছিল। তাদের কাছ থেকে প্রশ্ন পাওয়া এক ছাত্রকে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, নিট পরীক্ষার আগের রাতে প্রায় ৩৫ জন পরীক্ষার্থীকে পটনার খেমনিচক এলাকায় লার্ন বয়েজ হোস্টেল এবং লার্ন প্লে স্কুল নামে একটি প্লে স্কুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল নিট পরীক্ষার প্রশ্ন এবং সেই সব প্রশ্নের উত্তর। উত্তরগুলি তাদের মুখস্ত করে নিতে বলা হয়েছিল।
বিহার পুলিশের এক সূত্র জানিয়েছে, এই তক্রের সদস্যরা প্রশ্ন ফাঁস করার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা করে নিত। এইভাবে কোটি কোটি টাকা রোজগার করেছে তারা। এর পিছনে একটি সংগঠিত চক্র থাকায়, এই মামলার তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছে বিহার পুলিশের বিশেষ অর্থনৈতিক অপরাধ শাখা বা ইওইউ-কে (EOU)। এর আগে বিহার পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রবেশিকা পরীক্ষা-সহ বেশ কয়েকটি প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলার সমাধান করেছে তারা। ইওইউ-এর আধিকারিকরা জানিয়েছেন, পরীক্ষার দিনই এই এই ফাঁস হওয়া প্রশ্ন কেনা চার শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। আরও নয়জনের সন্ধান পেয়েছে তারা। তাদের পুলিশি তদন্তে যোগ দেওয়ার জন্য তলব করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এখনও অবধি, এই ঘটনার সঙ্গে অন্তত ৩৫ জন ছাত্রছাত্রী জড়িত বলে খোঁজ পেয়েছে। এদের মধ্যে ১৩ জনকে ইতিমধ্যেই তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে। তবে, ২২ জনকে এখনও তারা সনাক্ত করতে পারেনি।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, এই চক্রের মাথা হল সঞ্জীব সিং ওরফে সঞ্জীব মুখিয়া নামে নালন্দা জেলার এক ব্যক্তি। তাঁর স্ত্রী লোক জনশক্তি পার্টির নেত্রী। ২০২০ সালের বিধানসভা ভোটে প্রার্থীও হয়েছিলেন। কাজেই, জেলায় সঞ্জীব সিংয়ের ভালই প্রভাব রয়েছে। সঞ্জীবই ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রগুলি তুলে দিয়েছিল রকি নামে তার এক সহযোগীর হাতে। এনইইটি পরিক্ষার্থীদের উত্তর মুখস্ত করানোর দায়িত্বও ছিল রকির উপর। অন্যদিকে, সঞ্জীবের ছেলে শিব কুমারও পুরোনো অপরাধী। পটনা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করা শিব কুমারকে চলতি বছরের শুরুতেই উজ্জয়িনী থেকে বিহার পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রশ্ন ফাঁসের মামলায় গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। আপাতত সে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে আছে। এমনকি, এই বছরের শুরুতে উত্তর প্রদেশে পুলিশ নিয়োগের যে পরীক্ষা, প্রশ্ন ফাঁসের কারণে বাতিল করতে হয়েছিল, সেখানেও নাম জড়িয়েছিল শিব কুমারের। আদালত থেকে আগাম রক্ষাকবচ নিয়ে রেখেছে বলে, এখনও সঞ্জীব মুখিয়াকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
তবে, বিহার পুলিশের মতে, এখনও অবধি তাদের হাতে যে তথ্য প্রমাণ এসেছে, তা হিমশৈলের চূড়া মাত্র। স,মস্যা হয়েছে, বিহার পুলিশের অনেক প্রশ্নেরই উত্তর দিতে চাইছে না এনটিএ। এনটিএ এখনও দৃঢ়ভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি অস্বীকার করছে। বিহার পুলিশের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর কেরিয়ার ঝুঁকির মুখে। এই অবস্থায় এনটিএ-র পক্ষ থেকে যে আন্তরিকতা এবং দ্রুততার প্রয়োজন ছিল, তা এনটিএ-র পক্ষ থেকে দেখা যাচ্ছে না। পুলিশের একেকটি প্রশ্নের উত্তর দিতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে তারা। এনটিএ-কে পাশে না পেলে, এই মামলার সমাধান করা যাবে না বলে মনে করছে পুলিশ।