কেরলের ওয়েনাড় জেলায় মাত্র চার ঘণ্টার মধ্যে পরপর তিনটি ধস নেমেছিল


newsagartala24.com Images

Wayanad, Jul 30, 2024, ওয়েব ডেস্ক থেকে


বলা হয় গডস ওন কান্ট্রি, অর্থাৎ, ঈশ্বরের নিজস্ব দেশ। আর ঈশ্বরের এই নিজস্ব দেশই এক রাতের মধ্যে পরিণত হয়েছে নরকে। সোমবার গভীর রাতে, কেরলের ওয়েনাড় জেলায় মাত্র চার ঘণ্টার মধ্যে পরপর তিনটি ধস নেমেছিল। আর তাতেই তছনছ হয়ে গিয়েছে চা বাগানে ঘেরা এই জেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে, চার ঘণ্টার মধ্যে পরপর তিন বিধ্বংসী ধস নামে। চা বাগান এবং গ্রামের মধ্য দিয়ে নেমে আসে কাদা, জল এবং পাথর। চাপা পড়েছেন অসংখ্য মানুষ। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৯৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আরও অন্তত ১২৮ জন আহত বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। নিহতদের অধিকাংশই চা বাগানের শ্রমিক এবং তাদের পরিবার। অস্থায়ী বাসস্থানে রাতে ঘুমিয়ে ছিলেন তাঁরা। আর ঘুমের মধ্যেই তাঁদের উপর ভেঙে নেমে আসে পাহাড়। অথচ, এই ধরনের বিপর্যয় যে হতে পারে, তার সতর্কতা অনেক আগেই দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা।

জানা গিয়েছে, মধ্যরাতের কিছু পরই প্রথম ধস নেমেছিল। এটাই ছিল সবথেকে মারাত্মক। আঘাত নেমে এসেছিল ওয়ানাড়ের চুরমালা গ্রামে। প্রথম ধসেই প্রায় পুরো গ্রামটাই বিলীন হয়ে গিয়েছিল। স্থানীয় রিপোর্ট অনুযায়ী, চুরমালার ২০০টিরও বেশি বাড়ি ভেসে গিয়েছে। ভেঙে পড়ে গ্রামের রাস্তা ও সেতু। গ্রামের সংযোগকারী সেতুটি ভেঙে পড়ায় উদ্ধারকারী দলও ঘটনাস্থলে পৌঁছতে সমস্যায় পড়ে। ঘটনাস্থলের ছবি ও ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, উপড়ে পড়েছে গাছ। মাটিতে মিশে গিয়েছে চা বাগানের শ্রমিকদের টিনের তৈরি অস্থায়ী বাড়িগুলি। গাছ-বাড়ি-মানুষ সব কাদামাটির মধ্যে তাল পাকিয়ে গিয়েছে। যেখানে ছিল অন্তত ২৫০ পরিবারের বাস, সেখানে এখন পড়ে রয়েছে শুধু পাথর আর কাদা। একপাশ দিয়ে স্রোতে বয়ে চলেছে কাদামাখা জল। পরের দুটি ধসের প্রতিটি চুরমালার বিপদ আরও বেড়েছে।

কেরলের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ৪৫টি ত্রাণ শিবির স্থাপন করা হয়েছে। তিন হাজার মানুষকে সেই ত্রাণ শিবিরগুলিতে রাখা হয়েছে। পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং এনডিআরএফ উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করছে। অতিরিক্ত ১০৮টি অ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন করা হয়েছে। পাঁচজন মন্ত্রী উদ্ধারকাজে সমন্বয় করছেন। উদ্ধার অভিযানে দমকল বাহিনীর ৩২১ জন সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে। এনডিআরএফ-এর একটি ৬০ সদস্যের দল ওয়ানাড়ে পৌঁছেছে। বেঙ্গালুরু থেকে আরও একটি ৮৯ সদস্যের দল আসছে। উদ্ধার অভিযানে কাজে লাগানো হচ্ছে ডগ স্কোয়াডও। ইতিমধ্যেই উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছে ভারতীয় সেনাও। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিবিরে থাকা মানুষদের পানীয় জল, খাবার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় হেলিকপ্টারে করে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।\

কেরল ব্যাঙ্ক ইতিমধ্যেই ৫০ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছে। সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী ২ কোটি টাকা এবং তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ৫ কোটি টাকা সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য সরকার কেলে দু’দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী-সহ বিভিন্ন দলের নেতারা কেরলকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিজয়ন। এর পাশাপাশি, নিহতদের প্রত্যেকের আত্মীয়স্বজনদের জন্য প্রধানমন্ত্রী রিলিফ ফান্ড থেকে ২ লক্ষ টাকা করে এক্স-গ্রাশিয়া দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। আহতদের দেওয়া হবে ৫০,০০০ টাকা। বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়ানোর আবেদন করেছেন।