টাইটানিক যার খোঁজ পেতে লাগে ৭৩ বছর


newsagartala24.com Images

আগরতলা, Apr 27, 2024, ওয়েব ডেস্ক থেকে 2024


টাইটানিক যার খোঁজ পেতে লাগে ৭৩ বছর। ১৯১২ সালের ১৫ই এপ্রিল উত্তর অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে গিয়েছিলো টাইটানিক৷ ( আসলে ১৪ই এপ্রিল থেকে এটি ডুবতে শুরু করেছিল )। তাকে খুঁজে পেতে বিজ্ঞানীদের অপেক্ষা করতে হয়েছে কয়েক দশক৷ কেননা তখনও আধুনিক প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতার কারণে সমুদ্রের অতি গভীরে সন্ধান করা সম্ভব ছিল না।
টাইটানিকের ডুবে যাওয়াটা বিশ্বাস করতেই মানুষের সময় লাগে বহুবছর। এরপর শুরু হয় খোঁজার ভাবনা।
টাইটানিক ডুবে যাওয়ার পর এর উদ্ধারের কথা ভেবেছিলো এর মালিক ব্রিটিশ কোম্পানি হোয়াইট স্টার লাইন৷ তারা ভেবেছিলো অত্যন্ত শক্তিশালী চুম্বক অথবা বিশাল আকারের কোন বেলুনের সাহায্যে জাহাজটিকে সমুদ্রের গভীর থেকে তুলে আনা যাবে৷ কিন্তু সেসব পরিকল্পনাই সার। কারণ জাহাজটি যে কোথায় ডুবে আছে তারই হদিশ তারা পায়নি।

এরপর ফরাসি আর মার্কিন বিজ্ঞানীরা টাইটানিক খোঁজা শুরু করেন৷ ১৯৭৭, ১৯৮০, ১৯৮১ এবং ১৯৮৩ সালে টাইটানিক উদ্ধারের জন্য উত্তর অ্যাটলান্টিকে ব্যাপক তল্লাশি চালানো হয়৷ তবে কোন সাফল্য আসেনি৷ ১৯৮৫ সালে আবারও অভিযান শুরু হয়৷ ফ্রেঞ্চ রিসার্চ ইন্সটিটিউট ফর এক্সপ্লোরেশন অব দ্য সি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস এর উডস হোল ওশেনোগ্র্যাফিক ইন্সটিটিউশন এর একটি দল এবার সমুদ্রে নামে৷ তাদের জাহাজটির নাম ছিল ল্য সুরোয়া৷ এই দলের অন্যতম অভিযাত্রী ছিলেন ফরাসি গবেষক জঁ লুই মিশেল৷ তিনিই প্রথম সমুদ্রের বুকে টাইটানিককে দেখতে পান৷

জাহাজটি ঠিক কোন জায়গাটিতে ডুবে আছে, সেটি বের করা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ৷ ল্য সুরোয়া জাহাজের গবেষকরা প্রথমে প্রায় ৪০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা বেছে নেন৷ এরপর তারা সমুদ্রের গভীরে নামান সোনার এবং ম্যাগনেটোমিটার যন্ত্র৷ এই যন্ত্রগুলো প্রতিফলিত শব্দতরঙ্গের সাহায্যে সমুদ্রের জলের ভিতর ধাতু শনাক্ত করতে পারে৷ ওই সময় ফরাসিদের কাছে ছিলো সেরা প্রযুক্তির সোনার যন্ত্র৷ অন্যদিকে মার্কিনীদের কাছে ছিলো যন্ত্রচালিত ডুবুরি বা ছোট্ট ডুবোজাহাজ৷ তাতে ছিলো ক্যামেরা৷ প্রথমে অভিযাত্রীরা সমুদ্রের ১৫ থেকে ২০ মিটার গভীরে সোনার নামিয়ে ধাতু শনাক্তের চেষ্টা করেন৷ এজন্য ল্য সুরোয়া জাহাজটিকে এক কিলোমিটার ব্যাসাদ্ধের মধ্যে আগুপিছে  করে চালনো হয়৷ এভাবে গোটা ৪০০ কিলোমিটার সমুদ্র এলাকাকে ছোট ছোট স্কোয়ারের মত করে ভাগ করা হয় এবং সেসব জায়গায় তল্লাশি চলতে থাকে৷ একদিন হঠাৎ করেই সোনার মেশিন ধাতু বস্তুর সিগন্যাল দিতে থাকে৷

১৯৮৫ সালের ২৫শে আগস্ট, ল্য সুরোয়া তখন ক্নর নামে আরেকটি অত্যাধুনিক ডুবোজাহাজকে ডাকে৷ সেই জাহাজটিতে ছিলো রিমোট কন্ট্রোল চালিত একটি ডিপ সি ভেহিকল যার নাম আর্গো৷ এর ভেতরে করে এবার অভিযাত্রী জঁ লুই মিশেল ও তার সঙ্গীরা সমুদ্রের গভীরে চলে যান। এরপর ১লা সেপ্টেম্বর আর্গো নামে সমুদ্রের গভীরে৷ ভেতরে টিভি স্ক্রিনের দিকে নজর রাখতে শুরু করেন মিশেল৷ তারপর সেদিনের ঘটনা তিনি বর্ণনা করেন এভাবে, ‘‘প্রথমে সমুদ্রতলে আমি অস্বাভাবিক কিছু দেখতে পাই৷ জিনিসটি নড়ছিলো৷ আর কয়েক মিটার সামনে  

এগুনোর পর কী যেন চকচক করে উঠলো৷ তার মানে সেটা কোন ধাতু হবে৷ আর্গোতে থাকা ক্যামেরাটি আরও খানিকটা সামনে নেওয়ার পর আরও ধাতু দেখতে পেলাম৷ আমরা দেখলাম একটি রেলিং এর টুকরো....এটা আসলে জাহাজের একটা টুকরো৷'' কিন্তু তখনও অভিযাত্রীরা জানতেন না যে এটাই টাইটানিক,,

নতুন আবিষ্কারের উত্তেজনায় ডিপ সি ভেহিকল আর্গো আরও খানিকটা এগিয়ে যায়৷ মিশেল বলেন,""আমরা ক্রমে আরও ভাঙ্গা ধাতুর টুকরো দেখতে পেলাম৷ কয়েক মিটার এগুনোর পর সবচেয়ে বড় টুকরোটি দেখতে পেলাম চার মিটার ব্যাস ও আট মিটার উঁচু৷ আমি সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পেলাম এটা জাহাজের বয়লার এবং এটা টাইটানিক, কারণ ছবিতে আমি এটাই দেখেছিলাম৷'',,

ডুবে যাওয়ার সময় টাইটানিক দুই টুকরো হয়ে যায়৷ আর সেটি পাওয়া যায় সর্বশেষ এসওএস এর স্থল থেকে ২১ কিলোমিটার দূরে৷ তবে শেষ পর্যন্ত মানুষের নাগালে আসে টাইটানিক৷ সমাপ্তি ঘটে বহুদিনের অজানা এক অধ্যায়ের,,

তথ্যসমূহঃ বাংলা উইকিপিডিয়া থেকে সংগৃহীত।

(ছবিটি গুগল থেকে নেওয়া)