ভারতের আইনে বিরাট পরিবর্তন, এতদিনের সমস্যা মিটবে ক্ষণিকে


newsagartala24.com Images

Agartala, Jul 19, 2024, ওয়েব ডেস্ক থেকে


প্রত্যন্ত গ্রাম থেকেই শহরের কলেজে পড়তে আসে পারুল (নাম পরিবর্তিত)। অভাবের সংসারে অনেক কষ্ট করেই নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই কলেজের পাশাপাশি শহরে দুটো টিউশন জোগাড় করেছে। লেখাপড়ার খরচা জোগানোর জন্যই পারুলের এই জীবনযুদ্ধ। এ রকমই বর্ষার এক সন্ধ্যায় কলেজে করে পড়াতে গিয়েছিল সে। বর্ষার ঘন কালো মেঘ বিকাল সাড়ে ৫টাতেই নামিয়ে এনেছিল সন্ধ্যা। টিউশন পড়িয়ে গলির রাস্তা ধরে যেতে হয় পারুলকে। সে দিন অন্ধকার গলি দিয়ে ফেরার সময় বিপদ ওঁৎ পেতে বসেছিল। অচেনা শহরে সম্পূর্ণ অচেনাদের হাতে শ্লীলতাহানির শিকার হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল পারুলকে। বাড়ির লোক ঘটনার কথা চেপে যেতে চাইলেও, সে চেয়েছিল দোষীরা শাস্তি পাক। তাই বাড়ির লোকের অমতেই স্থানীয় থানায় গিয়েছিল অভিযোগ জানাতে। কিন্তু ঘটনা ঘটেছিল শহরের থানা এলাকায়। তাঁর বাড়ি ছিল অন্য থানার অধীনস্ত। সেই থানা নেয়নি পারুলের অভিযোগ। যেখানে ঘটনা ঘটেছে সেখানকার থানায় যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। কলেজে ভর্তির ৬ মাসও হয়নি তখনও। নতুন শহরের আঁটঘাট জানা ছিল না প্রথম বর্ষের ছাত্রীর। তার উপর ২ দিন কলেজে ছুটি থাকায়, শহরে আসেনি পারুল। লোকলজ্জার ভয়ে তার পরিবারের লোকেরাও বিষয়টি চেপে যেতে চেয়েছিল। সব মিলিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনার অভিযোগ জানানো আর হয়নি। সেই সন্ধ্যার বিভীষিকা মনে নিয়েই দিন কাটাতে হচ্ছে পারুলকে।

পারুলের এই অভিজ্ঞতা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আমাদের দেশে এ রকম হাজার হাজার ঘটনা বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে, যেখানে নিজেদের এলাকায় অপরাধ ঘটেনি বলে অভিযোগ নিতে চায়নি থানা। এ সব নিয়ে বিতর্কও হয়েছে বিস্তর। আইনের জটিলতায় বিচার পায়নি সাধারণ মানুষ। দেশে আইনি ব্যবস্থা থাকলেও তা ন্যায় দিতে পারেনি নিপীড়িতকে। কিন্তু এই সমস্যার অবসান ঘটাতে নতুন আইনে করা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। যার নাম জিরো এফআইআর বা Zero FIR. এটি এফআইআর-এর এক বিশেষ ধরন। যার অধীনে যে কোনও থানাতেই অভিযোগ জানানো যায়। যে এলাকায় অপরাধ ঘটেছে, সেখানকার থানাতে গিয়েই অভিযোগ জানাতে হবে- এ রকম বাধ্যবাধকতা আর নেই।

১ জুলাই থেকে দেশের আইনি ব্যবস্থায় বড় বদল এসেছে। দেড়শো বছরের বেশি সময় ধরে চালু থাকা ইন্ডিয়ান পিনাল কোড বা ভারতীয় দণ্ডবিধির অবলুপ্তি ঘটিয়েছে কেন্দ্রের এনডিএ সরকার। ব্রিটিশ আমলের আইনের সমাপ্তি হয়ে লাগু হয়েছে নতুন আইন। সেই আইনের নাম দেওয়া হয়েছে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা। আইনজীবী-বিচারকরা জানাচ্ছেন, পুরনো আইনের কিছু পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করেই নতুন আইন বানানো হয়েছে। বেশ কিছু নতুন আইন যেমন অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তেমন অনেক আইন অবলুপ্ত হয়েছে। আবার পুরনো অনেক আইনের পরিসর বৃদ্ধি করা হয়েছে ন্যায় সংহিতায়। সেই ন্যায় সংহিতাতেই জিরো এফআইএর-এ বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জিরো এফআইআর কী? এর কী সুবিধা? কোন ক্ষেত্রে তা দায়ের করা যায়? কীভাবে তা দায়ের করতে হয়? তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে টিভি৯ বাংলার এই বিশেষ প্রতিবেদনে।

ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় জিরো এফআইআর নিয়ে নির্দিষ্ট নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। সেখানে এই বিশেষ ধরনের এফআইএর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। তবে জিরো এফআইআর এই আইনের মাধ্যমেই ভারতীয় বিচারব্যবস্থায় এল এমন নয়। আজ থেকে এক দশক আগেই জিরো এফআইআর নিয়ে সরব হয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আদালতের রায়ে এই বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। আদালতের নির্দেশে পুরনো আইনেই অ্যামেন্ডমেন্ড করে জিরো এফআইআর অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। কিন্তু নতুন আইনের ধারায় এ নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। জিরো এফআইআর-এর চল আরও বাড়াতেই এই পদক্ষেপ। জিরো এফআইআর-এ যে সুবিধা মেলে, তা করতে অতীতে একাধিক বার নির্দেশ দিয়েছে দেশের বিভিন্ন আদালত। ১৯৯৯ সালে সতবিন্দর সিং ও রাজ্যের মধ্যে হওয়া মামলায় দিল্লি হাইকোর্ট জানিয়েছিল- কোনও মহিলা যে কোনও থানায় অভিযোগ জানালে সে অভিযোগ নিতে হবে। বিষয়টি সবথেকে বেশি গুরুত্ব পায় নির্ভয়া গণধর্ষণ মামলা ঘিরে। ২০১২ সালে নির্ভয়ার মৃত্যু ঝড় তুলেছিল গোটা দেশে। সেই মামলার প্রেক্ষিতেই বিচারপতি ভার্মার নেতৃত্বাধীন কমিটি জিরো এফআইআর চালু করতে বলে। এর পর ২০১৩ সালে সিআরপিসি-তে অ্যামেন্ডমেন্ট করা হয়। জিরো এফআইআর-এর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু তার পরও এ ধরনের অভিযোগ দায়ের নিয়ে টালবাহানা হয়েছে। এ রকম একাধিক ঘটনা সামনে এসেছে। সময়ে সময়ে পুলিশের ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতেই জিরো এফআইআর গুরুত্ব পেয়েছে ভারতীয় ন্যায় সংহিতায়।