আমার কাছে আপনারাই আমার পরিবার, আপনাদের স্বপ্নই আমার সংকল্প : প্রধানমন্ত্রী
Agartala, Jan 25, 2024, ওয়েব ডেস্ক থেকে
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরে ১৯ হাজার ১০০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেছেন। প্রকল্পগুলি রেল, সড়ক, তেল ও গ্যাস এবং নগরোন্নয়ন ও আবাসনের মতো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত৷
এ উপলক্ষে আয়োজিত একটি জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বুলন্দশহরের অধিবাসীদের বিশেষ করে, সমাবেশে বিপুল সংখ্যায় আগত মা ও বোনেদের স্নেহ ও আস্থার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। শ্রী মোদী ২২-শে জানুয়ারি ভগবান শ্রী রামের দর্শন এবং আজকের এই উপলক্ষে উত্তরপ্রদেশের মানুষের উপস্থিতির জন্য ধন্যবাদ জানান। রেল, মহাসড়ক, পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন, জল, পয়ঃপ্রণালী, মেডিক্যাল কলেজ এবং শিল্পনগরী ক্ষেত্রে ১৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগের প্রকল্পগুলির জন্য বুলন্দশহর এবং সমগ্র পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের জনগণকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। যমুনা ও রামগঙ্গা নদীর পরিচ্ছন্নতা অভিযান সম্পর্কিত প্রকল্পগুলির উদ্বোধনের কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অঞ্চল কল্যাণ সিংয়ের মতো এক পুত্র জাতিকে দিয়েছে, যিনি রাম কাজ এবং রাষ্ট্র কাজ উভয়ের জন্যই নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। অযোধ্যা ধামে শ্রী কল্যাণ সিং এবং তাঁর মতো মানুষদের স্বপ্ন দেশ পূরণ করায় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন। মোদী বলেন, “তাঁর শক্তিশালী দেশ এবং সত্যিকারের সামাজিক ন্যায়বিচারের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে আমাদের আরও গতি অর্জন করতে হবে”।
অযোধ্যায় প্রাণ প্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ হওয়ার বিষয়টির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ‘রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠান’কে অগ্রাধিকার দেওয়ার এবং একে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ওপর জোর দেন। ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে বিকশিত ভারতে রূপান্তরিত করার সরকারের দৃঢ় সংকল্পের কথা তুলে ধরে শ্রী মোদী বলেন, “আমাদের অবশ্যই দেব থেকে দেশ এবং রাম থেকে রাষ্ট্রের পথকে আরও সাহসী করে তুলতে হবে”। উচ্চ লক্ষ্য পূরণের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী সবকা প্রয়াসের চেতনা বরাবর প্রয়োজনীয় সমস্ত সহায়সম্পদ একত্রিত করার ওপর জোর দেন। কৃষি, বিজ্ঞান, শিক্ষা, শিল্প ও উদ্যোগের ক্ষেত্রগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিকশিত ভারত গঠনের জন্য উত্তরপ্রদেশের দ্রুত উন্নয়ন অপরিহার্য।
স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে উন্নয়নের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ভারসাম্যহীনতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বাধিক জনসংখ্যার রাজ্য উত্তরপ্রদেশ ছিল অবহেলিত। প্রধানমন্ত্রী ‘শাসক’ মানসিকতার সমালোচনা করেন এবং বলেন, আগেকার দিনের ক্ষমতার দোহাই দিয়ে সামাজিক বিভাজনকে উস্কে দেওয়ার ফলে রাজ্য তথা দেশের বিপুল মূল্য দিতে হয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন, দেশের বৃহত্তম রাজ্য যদি দুর্বল হয়, তাহলে দেশ কীভাবে শক্তিশালী হতে পারে?
প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশে ডবল ইঞ্জিন সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে পুরনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রাজ্য নতুন উপায় খুঁজে পেয়েছে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে গতি সঞ্চার করেছে। উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলের সাম্প্রতিক অগ্রগতির দৃষ্টান্ত তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী ভারতে দুটি প্রতিরক্ষা করিডরের একটির উন্নয়ন এবং বেশ কয়েকটি নতুন জাতীয় মহাসড়ক সৃষ্টির কথা উল্লেখ করেন। তিনি আধুনিক এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে উত্তরপ্রদেশের সমস্ত অংশে যোগাযোগ বাড়ানো, প্রথম নমো ভারত ট্রেন প্রকল্পের সূচনা, বেশ কয়েকটি শহরে মেট্রো সংযোগ এবং রাজ্য পূর্ব ও পশ্চিম ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরের কেন্দ্র হয়ে ওঠার উপর জোর দিয়েছে। এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলি আগামী শতাব্দীগুলিতে প্রভাব ফেলবে বলে তিনি জোর দেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী আরও বলেন, জেওয়ার বিমানবন্দরের কাজ শেষ হলে এই অঞ্চলটি একটি নতুন শক্তি এবং উড়ান খুঁজে পাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজ সরকারের প্রচেষ্টায় পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ দেশের অন্যতম প্রধান কর্মসংস্থান সরবরাহকারী অঞ্চল হয়ে উঠছে”। প্রধানমন্ত্রী জানান, সরকার চারটি বিশ্বমানের শিল্প স্মার্ট সিটি গড়ে তোলার কাজ করছে। এই শহরগুলির মধ্যে একটি পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের গ্রেটার নয়ডায় অবস্থিত, যা আজ প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করলেন। এর ফলে, সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের শিল্প এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পী ও ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, এই টাউনশিপ কৃষিভিত্তিক শিল্পের জন্য নতুন পথ তৈরি করবে এবং স্থানীয় কৃষক ও শ্রমিকদের প্রচুর সুবিধা প্রদান করবে।
কৃষিক্ষেত্রে আগেকার সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবের বিরূপ প্রভাবের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন বিমানবন্দর এবং নতুন পণ্য পরিবহণ করিডরে এর সমাধান দেখা যেতে পারে। আখের মূল্য বৃদ্ধি এবং মান্ডিতে উৎপাদিত ফসল বিক্রির পর কৃষকদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি অর্থ প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ডবল ইঞ্জিন বিশিষ্ট সরকারের বিশেষ প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। একইভাবে, ইথানলের উপর নজর আখ চাষিদের জন্য লাভজনক প্রমাণিত হচ্ছে।
শ্রী মোদী জোর দিয়ে বলেন, “কৃষকদের কল্যাণ সরকারের একটি শীর্ষ অগ্রাধিকার”। তিনি বলেন, সরকার কৃষকদের জন্য একটি সুরক্ষা কবচ তৈরির চেষ্টা করছে এবং ভারতীয় কৃষকদের জন্য কম দামে সার সরবরাহ করতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করার কথা উল্লেখ করেন। তিনি জানান, ভারতের বাইরে যে ইউরিয়ার দাম ৩০০০ টাকা, তা কৃষকদের জন্য ৩০০ টাকারও কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী ন্যানো ইউরিয়া তৈরির কথাও উল্লেখ করেন যেখানে একটি ছোট বোতল এ বস্তা সারের চাহিদা পূরণ করে, যার ফলে খরচ হ্রাস পায় এবং অর্থ সাশ্রয় হয়। শ্রী মোদী জানান, প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরকার ২.৭৫ লক্ষ কোটি টাকা স্থানান্তর করেছে।
কৃষি ও কৃষি-অর্থনীতিতে কৃষকদের অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সমবায়ের পরিধি ক্রমাগত সম্প্রসারণের কথা উল্লেখ করেন। তিনি পিএসি, সমবায় সমিতি এবং এফপিওগুলিকে ক্ষুদ্র কৃষকদের শক্তিশালী করার ব্যবস্থা হিসাবে তালিকাভুক্ত করার কথা বলে উল্লেখ করেন, বিক্রয়, ক্রয়, ঋণ, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ বা রফতানির জন্য সমবায় সংস্থাগুলিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। শ্রী মোদী বিশ্বের বৃহত্তম স্টোরেজ সম্পর্কিত কর্মসূচিগুলির কথাও উল্লেখ করেন, যার আওতায় সমগ্র দেশে হিমঘরের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে।
কৃষিক্ষেত্রের আধুনিকীকরণে সরকারের উদ্যোগের কথা পুনরায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারী শক্তি এক্ষেত্রে একটি বিরাট মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে। তিনি নমো ড্রোন দিদি প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে ড্রোন পাইলট হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। নমো ড্রোন দিদি ভবিষ্যতে গ্রামীণ অর্থনীতি ও কৃষির জন্য একটি বিশাল শক্তি হয়ে উঠতে চলেছে।
ক্ষুদ্র কৃষক ও মহিলাদের ক্ষমতায়নে গত ১০ বছরে গৃহীত জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী কোটি কোটি পাকা বাড়ি নির্মাণ, শৌচাগার, নলের জলের সংযোগ, কৃষক ও শ্রমিকদের জন্য পেনশনের সুবিধা, বিনামূল্যে রেশন প্রকল্প, এবং আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা প্রকল্প যেখানে ফসল নষ্ট হলে কৃষকদের দেড় লক্ষ কোটি টাকারও বেশি অর্থ প্রদান করা হয়েছে। শ্রী মোদী আরও বলেন, সরকারের প্রচেষ্টা যাতে কোনও সুবিধাভোগী সরকারি প্রকল্প থেকে বঞ্চিত না হন এবং এর জন্য মোদী কি গ্যারান্টির গাড়িগুলি প্রতিটি গ্রামে পৌঁছে যাচ্ছে এবং উত্তরপ্রদেশেও লক্ষ লক্ষ মানুষকে নথিভুক্ত করছে”।
তিনি বলেন, “এটা মোদীর গ্যারান্টি যে প্রত্যেক নাগরিক সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পান। আজ জাতি মোদীর গ্যারান্টিকে যে কোনও গ্যারান্টি পূরণের গ্যারান্টি হিসাবে বিবেচনা করে”। তিনি বলেন “আজ আমরা সরকারি প্রকল্পের সুবিধা প্রতিটি সুবিধাভোগীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। সেই কারণেই সম্পৃক্তির গ্যারান্টি দিচ্ছেন মোদী। ১০০ শতাংশ সুফলভোগীর কাছে পৌঁছনোর ওপর জোর দিচ্ছেন মোদী। এতে বৈষম্য বা দুর্নীতির সম্ভাবনা দূর হয়। এটাই সত্যিকারের ধর্মনিরপেক্ষতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার। তিনি বলেন, কৃষক, মহিলা, দরিদ্র ও যুবকদের স্বপ্ন প্রতিটি সমাজে সমান। তিনি বলেন, সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় গত ১০ বছরে ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনা সম্ভব হয়েছে।
ভাষণের শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে আপনারাই আমার পরিবার। আপনাদের স্বপ্নই আমার সংকল্প। তিনি জোর দিয়ে বলেন, মোদীর সম্পদ দেশের সাধারণ পরিবারের ক্ষমতায়নের মধ্যেই রয়ে গেছে। গ্রাম, দরিদ্র, যুব, মহিলা বা কৃষক – সকলের ক্ষমতায়নের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল শ্রীমতী আনন্দীবেন প্যাটেল, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী শ্রী ব্রজেশ পাঠক এবং ভারতের কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক প্রতিমন্ত্রী জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) ভি কে সিং৷