ভারতের বাঁধ এবং বাংলাদেশের অবৈধ বাঁধ পরিদর্শন করেন।
আগরতলা, Feb 02, 2025, ওয়েব ডেস্ক থেকে 2025
কৈলাসহরের রাঙ্গাউটি গ্রামের দেবীপুর এলাকায় ভারত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের ১৮৪৯নম্বর পিলারের কাছে বাংলাদেশ সরকার যে অবৈধ বাঁধ নির্মাণ করেছে তা সরজমিনে পরিদর্শন করেন ত্রিপুরা সরকারের সচিব কিরন গিত্যে। দুসরা ফেব্রুয়ারি রোববার বিকেলে বাঁধ পরিদর্শনে ত্রিপুরা সরকারের সচিব কিরন গিত্যের সাথে ছিলেন ঊনকোটি জেলার জেলাশাসক দিলীপ কুমার চাকমা, ঊনকোটি জেলার পুলিশ সুপার কান্তা জাংগীর, অতিরিক্ত জেলাশাসক অর্ঘ সাহা, কৈলাসহরের মহকুমাশাসক প্রদীপ সরকার, কৈলাসহরের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক জয়ন্ত কর্মকার, বি.এস.এফের পানিসাগর সেক্টরের ডি.আই.জি রাজীব ভটসরাজ(Rajib Vatsraj), বি.এস.এফের ১৯৯নম্বর ব্যাটেলিয়নের কমানডেন্ট অতুল সাইনিয়া সহ বি.এস.এফ এবং প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের অন্যান্য আধিকারিকরা। কিরন গিত্যে রোববার দুপুরে কৈলাসহরে এসে প্রথমে কৈলাসহরের সার্কিট হাউসের কনফারেন্স হলঘরে বিভিন্ন লাইন ডিপার্টমেন্টের আধিকারিকদের সাথে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে কৈলাসহরের দূর্গানগর এলাকায় বিদ্যুতিক চুল্লীর শ্মশান ঘাটের কাজ পরিদর্শন করে শ্রীরামপুর এলাকায় মনু নদীর পাড়ের দুর্বল বাঁধ পরিদর্শন করে দেবীপুর এলাকায় ভারত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তে যান। কিরন গিত্যে আন্তর্জাতিক সীমান্তে গিয়ে প্রথমে বি.এস.এফের আধিকারিকদের সাথে বাংলাদেশের অবৈধ বাঁধ সহ দেবীপুর, লাটিয়াপুড়া সহ আরও অন্যান্য এলাকার সীমান্ত ঘেষা মনু নদীর পাড়ের বাঁধের খোঁজ খবর নেন। তবে, বি.এস.এফের আধিকারিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে বাংলাদেশ সরকার যখন ১৮৪৯নম্বর পিলারের কাছে জিরো পয়েন্টে অবৈধ বাঁধ নির্মাণ করেছে তখন বি.এস.এফ কেন বাঁধা দেয়নি তারজন্য বি.এস.এফের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করতেও দেখা গিয়েছে কিরন গিত্যেকে। পরবর্তী সময়ে কিরন গিত্যে বি.এস.এফের পানিসাগর সেক্টরের ডি.আই.জি, ঊনকোটি জেলার জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারকে সাথে নিয়ে দেবীপুর এলাকার ভারত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের ভিতরে ঢুকে ভারতের বাঁধ এবং বাংলাদেশের অবৈধ বাঁধ পরিদর্শন করেন। দেবীপুর সীমান্তে ভারতের অংশে বাঁধের উপর পায়ে হেঁটে অনেক জায়গা ঘুরে দেখেন কিরন গিত্যে। সত্যিকার অর্থেই কৈলাসহরের বিভিন্ন এলাকায় মনু নদীর পাড়ের বাঁধের অবস্থা যে খারাপ তা সরজমিনে পরিদর্শন করেন কিরন গিত্যে। এবং বাংলাদেশ সরকার জিরো পয়েন্টে যে অবৈধ ভাবে উঁচু বাঁধ নির্মাণ করেছে তা থেকে ভারতের অংশের বাঁধ আরও বেশি উঁচু এবং মজবুত বাঁধ নির্মাণ করতে হবে সেটা ত্রিপুরা সরকারের সচিব কিরন গিত্যে অনুধাবন করতে পেরেছেন। দেবীপুর এলাকায় ভারত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের বাঁধ পরিদর্শন করতে কিরন গিত্যে আসবেন সেই খবর শোনে কৈলাসহরের গৌরনগর পঞ্চায়েত সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান মো: বদরুজ্জামান ঘটনাস্থলে হাজির হন। দেবীপুর এলাকায় ভারত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের জিরো পয়েন্টের বাঁধ পরিদর্শন করার পর গৌরনগর পঞ্চায়েত সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান মো: বদরুজ্জামান কৈলাসহরের দেবীপুর, লাটিয়াপুড়া, গোবিন্দপুর, শ্রীরামপুর, দূর্গাপুর, ছনতৈল সহ আরও অন্যান্য এলাকায় মনু নদীর পাড়ের বাঁধ দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে কোনো ধরনের সংস্কার করা হয়নি এবং অবিলম্বে বাঁধ পুনর্নির্মাণ কিংবা সংস্কার করতে হবে তার দাবী রাখেন কিরন গিত্যের কাছে। ভাইস চেয়ারম্যান মো: বদরুজ্জামানের দাবী শোনার পর কিরন গিত্যে জানান যে, খুব শীঘ্রই বাঁধের কাজ শুরু করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন। উল্লেখ্য, চলতি বছরের পনেরো জানুয়ারি ত্রিপুরা রাজ্য বিধাসভার অধিবেশন চলাকালীন কৈলাসহরের বিধায়ক বিরজিত সিনহা রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী মানিক সাহাকে জানিয়েছিলেন যে, দেবীপুর এলাকায় ভারত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের জিরো পয়েন্টের কাছে বাংলাদেশ সরকার অবৈধভাবে বাঁধ নির্মাণ করেছে। অবিলম্বে সে ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবী করেছিলেন বিধায়ক বিরজিত সিনহা। বিধায়ক বিরজিত সিনহার বক্তব্যের সাথে সাথেই রাজ্যের মন্ত্রী সুধাংশু দাশও সেব্যাপারে বিধায়ক বিরজিত সিনহার বক্তব্যকে সমর্থন করে রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী মানিক সাহাকে অনুরোধ করেছিলেন। সেইদিন মূখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা জানিয়েছিলেন যে, ব্যাপারটা যেহেতু দুই দেশের তাই খুব শীঘ্রই বিষয়টা কেন্দ্রীয় সরকারের নজরে নেওয়া হবে এবং উপযুক্ত উদ্যোগ নেওয়া হবে। সাথে সাথেই ১৬জানুয়ারি মূখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা ঊনকোটি জেলার জেলাশাসক দিলীপ কুমারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, খুব শীঘ্রই দেবীপুর এলাকায় ভারত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের জিরো পয়েন্টে গিয়ে বাংলাদেশ সরকার কি আদৌ বাঁধ নির্মাণ করেছে কিনা তা তদন্ত করে রিপোর্ট পাঠানোর জন্য। মূখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে জেলাশাসক দিলীপ কুমার চাকমা সতেরো জানুয়ারি প্রশাসনের আধিকারিকদের সহ গৌরনগর পঞ্চায়েত সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান মো: বদরুজ্জামানকে সাথে নিয়ে দেবীপুর এলাকায় ভারত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের জিরো পয়েন্টে গিয়ে সরজমিনে তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পান এবং সতেরো জানুয়ারি সন্ধ্যায় জেলাশাসক দিলীপ কুমার চাকমা রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার কাছে লিখিত ভাবে রিপোর্ট পাঠান। জেলাশাসকের লিখিত রিপোর্ট পেয়ে পরের দিন অর্থাৎ আঠারো জানুয়ারি মূখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা দিল্লিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের মন্ত্রী অমিত শাহের কাছে গিয়ে লিখিত ভাবে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অবৈধ বাঁধ নির্মাণের কথা জানান। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ সরকারের অবৈধ বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে এবং কৈলাসহরের বিভিন্ন এলাকায় মনু নদীর পাড়ের বাঁধ পুনর্নির্মাণ কিংবা সংস্কারের দাবীতে বিধায়ক বিরজিত সিনহা এবং জেলা কংগ্রেসের সভাপতি মোঃ বদরুজ্জামানের নেতৃত্বে ঊনকোটি জেলা কংগ্রেস ধারাবাহিক ভাবে কৈলাসহরে আন্দোলনে নেমেছে। চলতি মাসের ২৫জানুয়ারি ঊনকোটি জেলা কংগ্রেস কৈলাসহরে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে এবং পরবর্তী সময়ে ২৫জানুয়ারি ঊনকোটি জেলা কংগ্রেস টিলাবাজার থেকে দেবীপুর এলাকায় ভারত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের উদ্দেশ্যে লং মার্চ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। আগামী পনেরো দিনের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বাঁধের পুনর্নির্মাণ কিংবা সংস্কারের কোনো ধরনের উদ্যোগ নেওয়া না নিলে কৈলাসহর বনধেরও ডাক দিয়েছে ঊনকোটি জেলা কংগ্রেস। ঘুমন্ত প্রশাসনকে জাগাতেই কংগ্রেস আন্দোলন করেছে এবং কংগ্রেসের আন্দোলনের ফলেই ত্রিপুরা সরকারের টনক নড়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতেই ত্রিপুরা সরকারের সচিব কিরন গিত্যে দুসরা ফেব্রুয়ারি কৈলাসহরের দেবীপুর এলাকায় ভারত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের জিরো পয়েন্টে এসেছেন বলে জানান গৌরনগর পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান তথা ঊনকোটি জেলা কংগ্রেসের সভাপতি মোঃ বদরুজ্জামান