নিজেই হয়ে উঠুন নিজের বিদ্যুৎ উৎপাদক, বাড়িয়ে তুলুন আয়, পিএম সূর্য ঘর শিবিরে গিয়ে বললেন বিদ্যুৎ মন্ত্রী
আগরতলা, Jan 06, 2025, ওয়েব ডেস্ক থেকে 2024
শুধুমাত্র বিভিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গুলোর দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজেই নিজেকে বিদ্যুৎ উৎপাদক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য রাজ্যবাসীর প্রতি আবেদন জানালেন বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতন লাল নাথ। সোমবার ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম লিমিটেডের কর্পোরেট কার্যালয়ে পিএম সূর্য ঘর মুফত বিজলি যোজনার বিশেষ শিবিরে উপস্থিত হয়ে মন্ত্রী এ কথা বলেন। এদিন আগরতলা পুর নিগম এলাকার বিদ্যুৎ গ্রাহকদের জন্য সূর্য ঘর প্রকল্পে নাম নথিভুক্তকরণ, ব্যাংক ঋণ প্রদান এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে ভেন্ডার নির্বাচনের জন্য এক বিশেষ শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে । এই বিশেষ শিবিরে উপস্থিত হয়ে বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী এক ব্যতিক্রমী দিকদর্শী ব্যক্তিত্ব। আগামী দিনে দেশে যে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে সে সম্পর্কে এখন থেকেই তিনি পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন এর মাধ্যমে দেশবাসীকে সুরক্ষিত রাখতে চান। আগামী দিনে কয়লা শেষ হয়ে যাবে, গ্যাস শেষ হয়ে যাবে , ফলে প্রথাগত বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাবে। সে কথা মাথায় রেখেই প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এবার সূর্য শক্তিকে ব্যবহার করে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবার । শুধু তাই নয়, তিনি এক আশ্চর্য পরিকল্পনায় প্রতিটি পরিবারকে সরকারি ভর্তুকি সহ বিদ্যুৎ উৎপাদক হিসেবে গড়ে তুলে বিদ্যুৎ নিগমের কাছে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিক্রির মাধ্যমে উপার্জনের এক অপূর্ব সুযোগ এনে দিয়েছেন। বিদ্যুৎ মন্ত্রী জানান, ২০২৬ সালের পর এই সুযোগ থাকবে কিনা কে জানে? কিন্তু এর আগেই সরকারি ভর্তুকির সুযোগ নিয়ে পিএম সূর্য ঘর মুফত বিজলী যোজনার সুবিধা গ্রহণের জন্য বিদ্যুৎ মন্ত্রী রাজ্যবাসীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন । সোমবার বিদ্যুৎ নিগমের কর্পোরেট কার্যালয়ে আয়োজিত এই বিশেষ শিবিরে বিদ্যুৎ মন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ সচিব অভিষেক সিং এবং আগরতলা পুর নিগমের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কর্পোরেটরগন। বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে উৎসাহী মানুষেরা এদিন প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত জানতে ভিড় জমিয়েছেন। এই বিশেষ শিবিরে সোলার প্যানেল প্রতিস্থাপনকারী সরকার অনুমোদিত বিভিন্ন কোম্পানির লোকজনেরাও উপস্থিত ছিলেন। সেই সঙ্গে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক, কানারা ব্যাঙ্ক, ত্রিপুরা গ্রামীণ ব্যাংক, ত্রিপুরা স্টেট কো-অপারেটিভ ব্যাংক এর আধিকারিকরাও এদিন উৎসাহী ব্যক্তিদের ঋণ মঞ্জুর করার উদ্যোগ নিয়েছেন। উল্লেখ্য,
২০২৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পিএম সূর্য ঘর মুফত বিজলি যোজনার সূচনা করেন। যে প্রকল্পের লক্ষ্য আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ গিগা ওয়াট বিদ্যুতের পরিকল্পনা। এখন পর্যন্ত দেশে ২০০ গিগা ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতন লাল নাথ । যা লক্ষ্যমাত্রার ৪০ শতাংশ । রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতনলাল নাথ আরো জানান, প্রধানমন্ত্রী ত্রিপুরা সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যকে বিশেষ ক্যাটাগরি রাজ্যের মর্যাদা দিয়ে এই রাজ্যের জনগণকে সূর্য ঘর প্রকল্পে উৎসাহিত করার জন্য ভর্তুকি বাড়িয়ে দেন। লক্ষ্য একটাই , বিদ্যুত বিলকে শূন্যে নামিয়ে আনা। এই প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে রতন বাবু আরো বলেন, এই প্রকল্পটি বাড়ির ছাদ, টিনের চাল কিংবা মাটিতেও পাটাতনের উপর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। প্রকল্পের লক্ষ্য হল, বাড়ির ছাদ কেন্দ্রিক সৌর বিদ্যুতের ক্ষমতা বাড়ানো এবং পরিবার গুলিকে তাদের নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম করা। গৃহস্থালী ক্ষেত্রে এই উদ্যোগটি ২০২৩-২৪ অর্থবছর (১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ থেকে শুরু) থেকে ২০২৬-২৭ অর্থবছর পর্যন্ত চলবে। এই সময়কাল পর্যন্ত সরকারি ভর্তুকি প্রদান করা হবে। এতে মোট আর্থিক ব্যয় হবে ৭৫,০২১ কোটি টাকা। এই প্রকল্পে সুবিধাভোগীদের ভর্তুকির বিষয়টির ব্যাখ্যা করে রতন বাবু জানান, আবাসিক সেক্টরে প্রথম ২ কিলো ওয়াট ক্ষমতা সোলার প্যানেল বসানোর ক্ষেত্রে প্রতি কিলোওয়াট এর জন্য ভর্তুকি ৩৩ হাজার টাকা। প্রথম ২ কিলো ওয়াট সোলার প্যানেল বসানোর পর পরবর্তী ১ কিলো ওয়াট সোলার প্যানেল বসানোর ক্ষেত্রে ভর্তুকি মিলবে ১৯ হাজার ৮০০ টাকা। ৩ কিলো ওয়াট সোলার প্যানেলের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ভর্তুকি ৮৫,৮০০ টাকা রেসিডেন্সিয়াল সেক্টরে ৩ কিলো ওয়াট সোলার প্যানেল বসানোর পর পরবর্তী সোলার প্যানেল বসানোর ক্ষেত্রে অর্থাৎ কিলোওয়াট বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আর কোন ভর্তুকি মিলবে না। হাউসিং সোসাইটি/ রেসিডেনশিয়াল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ইত্যাদির ক্ষেত্রে এবং ইলেকট্রিক্যাল ভেহিকেল চার্জিং এর ক্ষেত্রে ৫০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত সোলার প্যানেল বসাতে পারবেন। এ জন্য ভর্তুকি পাওয়া যাবে প্রতি কিলো ওয়াটে ১৯,৮০০ টাকা। প্রতিটি পরিবার সর্বোচ্চ ৩ কিলোওয়াট পর্যন্ত সৌর প্যানেল স্থাপন করতে পারবেন। নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ যে কোন ভোক্তা ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করতে পারবেন বলেও মন্ত্রী এদিন জানিয়েছেন। তিনি জানান যে কোন ব্যক্তি তার নিকটবর্তী বিদ্যুৎ নিগম কার্যালয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিতে পারবেন। এই প্রকল্পে প্রত্যেক আগ্রহী ব্যক্তিকেই ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ লিমিটেডের আধিকারিকরা সর্বতোভাবে সহযোগিতা করবেন। মন্ত্রী জানান, এদিনের বিশেষ শিবিরের পর আগরতলার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে শিবির করে নাম নথিভুক্ত করা হবে। এরমধ্যেই মোহনপুর পুর পরিষদের উদ্যোগেও বিশেষ শিবিরের আয়োজন করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। এরপর শুরু হবে রাজ্যের বিভিন্ন পুর এলাকায় এই শিবির । গোটা রাজ্যকে প্রধানমন্ত্রী সূর্য ঘর মুফত বিজলী যোজনার আওতায় আনার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন বিদ্যুৎ মন্ত্রী।